মাস্কের সঙ্গে করোনার বুস্টার ডোজে অনীহা কেনো?

শিমুল মাহমুদ: করোনা ভাইরাসের নতুন উপধরণ উদ্বেগ ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে। প্রতিদিন আক্রান্তের সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাসের এটি চতুর্থ ঢেউ৷ এই সময়ে সবচেয়ে সংকট তৈরি করছে, করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নিয়ে মানুষের অনাগ্রহ, সেই সঙ্গে মাস্ক পরিধান না করা।

বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতাল গুলোতে টিকা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা খুবেই অপ্রতুল।

ভোক্তাকণ্ঠের পক্ষ থেকে হাসপাতালে টিকা নিতে আসা ব্যাক্তি ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের কাছে জানতে চাওয়া হয়, টিকা নিয়ে অনাগ্রহের কারন।

তারা বলছেন, অনেকে জানেন না টিকার কয়েকটি ডোজ নিতে হয়, অনেকে টিকার এসএমএস পাননি। কেউ কেউ বলেছেন, টিকা নিলে শরীরে প্রচন্ডরকম ব্যাথা অনুভব হয়, জ্বর উঠে, তাই সে ভয়ে তারা আর টিকা নিতে চান না।
হাসপাতালে টিকা নিতে আসা ব্যাক্তিরা জানান, অলসতার সঙ্গে অনেক সময় কাজের ব্যাস্ততা থাকায় নিধারিত সময়ে তারা আসেননি। কেউ কেউ বলেছেন, করোনা এখন আর আগের মতো নেই তাই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

এদিকে গতকাল সারাদেশে একযুগে দ্বিতীয় বারের মতো পালিত হয়েছে বুস্টার ডোজ ক্যাম্পেইন। একদিনে দেশব্যাপী ৭৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, মঙ্গলবার বুস্টার ডোজ টিকা নিয়েছেন মাত্র ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩ জন।

তাদের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, ফাইজার, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দেওয়া হয়েছে।

দেশে টিকাদান কার্যক্রমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭২১ জন। এছাড়া দুই ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন ১২ কোটি ১ লাখ ৫ হাজার ৪২৩ জন মানুষ। আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তিন কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার ৮১৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, মানুষের মাঝে করোনার বুস্টার ডোজ টিকার অনীহা লক্ষ্য কিরা গেছে। এর কারন মানুষ, বুস্টার ডোজ টিকায় আসলেই আগ্রহ কম। আগের মতো আগ্রহ নিয়ে আসছে না। আশা করি আসবে, আর তা না হলে এটা নিয়মিত হবে। এর সাথে সারা দেশে মানুষ যেভাগে চলাফেরা করছে উদ্বেগের বিষয়।

শ্যামলীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার শিল্পী বলেন, ভ্যাকসিনের কাজ হচ্ছে শরীরে এন্ট্রিবডি তৈরি করা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
এখন যদি কেউ টিকা না নেয় তাহলে কিন্তু তার শরীরের আর এন্ট্রিবডি থাকছে না। ভাইরাস কোনো বাধা ছাড়াই শরীরে প্রবেশ করছে এবং সংক্রমিত হচ্ছে।

টিকা নেওয়ার সুবিধা হলো, সংক্রমণের ক্ষেত্রে এন্ট্রিবডি বাধা দেয়। ফলে সহজে ভাইরাসটা শরীরের প্রবেশ করতে পারে না। একই সঙ্গে যদি আক্রান্ত হয়ও আক্রান্ত ব্যাক্তিকে হাসপাতালে যেতে হয় না।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস প্রফেসর ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মাস্ক তো পড়তেই চায় না। হাত ধোয়া ভুলে গেছে। আর শারিরীক দূরত্ব নাই বলতে গেলে।’

‘রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছু চলছে স্বাভাবিক নিয়মে। মূলত এই কারণেই আবারও সংক্রমন বাড়ছে।’

টিকা নেওয়া মানুষের রক্তে ‘অ্যান্টিবডি’র মাত্রা ৩ থেকে ৬ মাস স্থায়ী হলেও পরে ধীরে ধীরে এটি কমে আসে। তাই নির্ধারিত সময়ে টিকা নিতে হবে।

তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী রোগ; মেডিকেলের ভাষায় যেটিকে বলা হয়
‘কোমরবিডি’। বিশেষ করে ৬০ উর্দ্ধ ব্যাক্তি যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বক্ষব্যাধি, ক্যান্সার ও কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কমবয়সী রোগীদের ক্ষেত্রেও কম সেটিও বলা যাবে না।

ডা.এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, এখন পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের বেশিরভাগ ‘কোমরবিডি’ সমস্যা থাকার কারণে মৃত্যু হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।